শেষ পর্যন্ত কি হবে?
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:১১:২৪ দুপুর
কাজের অবসরে ফেসবুকে ঢু মেরে আসি। দু'একজন প্রিয় বন্ধুর পোষ্ট পড়ি। দেশের হালচালও জানতে পারি তাদের মাধ্যমে। আজ এক বন্ধুর একটি পোষ্ট চোখে পড়ল। তার নামটি ইচ্ছে করেই আমার লেখায় উহ্য রাখছি। কারণ নতুন তথ্য আইনের গ্যাড়াকলে আমার লিখার দ্বারা যেন সে আটকে না যায়। এখন তো কোনো কিছু লিখতে অনেকেই শ'বার চিন্তা করেন। কি লিখতে সরকারি মহল কি বুঝে ফেলেন!!
একসময়ের তুখোড় কমিউনিষ্ট নেতা বর্তমানে আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষাখাতে আমাদের অনেক উন্নয়ন/অগ্রগতি (???) সাধিত হয়েছে ওনার আমলে। বেশী কিছু না বলে, একটি বাংলা কবিতাকে পাঠ্যক্রমে সংযুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করব। আমার মূল লেখার বিষয়টিও এটি। আমার না বলে আমার সেই ফেসবুক বন্ধুর বললেই ভালো হয়।
পঞ্চম শ্রেনীর বাংলা পাঠ্য পুস্তকে নাস্তিকদের গুরু হুমায়ুন আজাদের 'বই' নামক কবিতাটি যুক্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার বন্ধুর লেখার কিছু অংশ হুবহু তুলে দিচ্ছি-
".... উক্ত কবিতার
কয়েকটি পঙতি নিম্নে উল্লেখ
করা হলঃ
"যে বই তোমায় দেখায় ভয়
সেগুলো কোন বই-ই নয়,
সে-বই তুমি পড়বে না।
যে-বই তোমায় অন্ধ করে
যে-বই তোমায় বন্ধ করে,
সে-বই তুমি ধরবে না।"
সারমর্মে রহস্যজনকভাবেই উল্লেখ
করা হয় নি এখানে 'কোন বই' এর
কথা বলা হয়েছে যা আমাদের ভয়
দেখায়। অনেক শিক্ষক উক্ত 'ভীতিকর
বই' দ্বারা ভূতের গল্প, অশ্লীল গল্পের বই
প্রভৃতিকে সংজ্ঞায়িত করলেও
যারা কবিতার রচয়িতা শ্রী গুণধর হুমায়ুন
আজাদ সম্বন্ধে জানেন তারা ঠিকই
বুঝেছেন কবি ইহস্থলে 'ভীতিকর বই'
হিসেবে পবিত্র কুর'আন'কেই
বুঝিয়েছেন এবং এটি আমরাও
জানি উক্ত শিক্ষকেরাও জানেন
এবং আমাদের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও
পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও জানেন!!
এরপর আর বলার কিংবা বোঝার কিছুই
বাকি থাকার কথা না যে বর্তমানের
শিক্ষাব্যাবস্থার সূক্ষ্ণ উদ্দেশ্যটা কি! "
ধীরে ধীরে কি আমাদের ছেলেমেয়েদের হৃদয় থেকে ইসলামিক ভাবধারা এবং চিন্তা-চেতনা মুছে ফেলার এক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশবিশেষ নয়কি এগুলো? এই কবিতাটির সংযুক্তি কি সেই দিকটি ইঙ্গিত করছে না? ফেসবুকে এই লিখটিতেই আর একজন মন্তব্য করেছেন, তার ছেলে সিলেবাসে থাকাতে এই কবিতাটি মুখস্থ করছে। ছেলে যদি তাঁকে জিজ্ঞেস করতো, 'বাবা কোন বই এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে?' তিনি কি পারতেন সত্য কথাটি ছেলেকে বলতে? ফলে জেনে-শুনেই ঐ নাস্তিকবাদী কবিতাটি ছেলেকে পড়াতেই হচ্ছে এবং তাকেও বাধ্য হয়ে ওর প্রশ্নের উত্তরে মিথ্যে কথা বলতে হবে। এভাবে বিভিন্ন শ্রেণী থেকে মহানবীর জীবনী উঠিয়ে দেয়া হচ্ছে, হযরত ওমর (রাঃ) এর জীবনী তুলে দেয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন ইসলামী বিষয়গুলো তুলে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা কি কোনো প্রতিবাদ করেছি, করছি না করতে যাচ্ছি?
আমার প্রথম কন্যা যখন সাড়ে তিনবছর বয়সের, আমি বাসায় 'দ্য ম্যাসেজ' সিনেমাটির সিডি এনেছিলাম। নিজে দেখার সময়ে মেয়েও আমার দেখে এবং এই সিনেমাটি দ্বারা সে অনেক কিছুকে দীর্ঘদিন মনে রেখেছিল। কিভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলামের জন্য সাহাবারা ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, কতটা দৃঢ় মনোবলের ছিলেন তাঁরা, সত্যের জন্য কতটা নির্ভীক ছিলেন- এসব কিছু ঐ সিনেমাটিতে ছিল। এখান থেকেই মেয়ে আমার হযরত বেলাল (রাঃ), হযরত হামযাহ (রাঃ), হিজরত এর ঘটনা, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মক্কা এবং মদীনার জীবন, বদর এবং ওহুদের যুদ্ধ, হুদায়বিয়ার সন্ধি, মক্কা বিজয় এসকল ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে। এরপর একটু একটু করে বড় হতে থাকে, সিনেমাটি দেখে তার ভিতরে ইসলাম সম্পর্কে আরো জানার আগ্রহ গড়ে উঠে। এটি সম্ভব হয়েছে, 'দ্য ম্যাসেজ' এর মত একটি সিনেমা তৈরী হয়েছিল বলে। ঠিক এভাবে আমাদের শিশুদের কচিমনে প্রভাব বিস্তার করে এমন সব ইসলামী লিখনি দিয়ে তাঁদের পাঠ্যপুস্তক সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। এর দ্বারা তাঁরা এই বয়সেই একটি সহীহ বুঝ পাবে, ইসলামিক ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে সামনের জীবনকে গড়ে নিতে চাইবে।
কিন্তু যেভাবে বর্তমানে পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামকে ধীরে ধীরে অবলেপন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তাতে আমি শংকিত অদূর ভবিষ্যতে পরবর্তী প্রজন্ম হয়ত ইসলামিক সংস্কৃতি থেকে বহুদূরে এক বিকল্প, বিদয়াতি মিশ্র সংস্কৃতির দিকে প্রচন্ডভাবে আকৃষ্ট হবে।
আজ আমার ক্লাশ টু-তে পড়ুয়া ছোট মেয়ে স্যাটেলাইট চ্যানেলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কার্টুন চ্যানেলগুলো থেকে বিজাতীয় সংষ্কৃতির ধারক-বাহক অনুষ্ঠানগুলো দেখে সেদিকেই তাড়িত হচ্ছে। ডোরেমন কার্টুন দেখে দেখে মিথ্যে বলার শিক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু আজ আমি আমার বড় মেয়ের মত 'দ্য ম্যাসেজ' এর মত কিছু ছোট মেয়েকে দিতে পারি নাই। কিছুটা সমাভাবে, কিছুটা নিজের উদাসীনতার জন্য এবং অনেকটা আমাদের সমাজপতিদের অদূরদর্শিতার কারনে।
যে দেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান, ইসলাম রাষ্ট্রীয় ধর্ম- সে দেশের জাতীয় টেলিভিশনে কি ইসলামিক ভাবধারায় সমৃদ্ধ এমন কোনো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হচ্ছে? এমন কোণো চানেল কি রয়েছে যেখান থেকে শিশুরা ওদের মত করে ইসলামকে জানতে পারবে? আজ বাজার ভর্তি বিভিন্ন গেমস দিয়ে। সেখানে এমন কোনো গেমস বা অ্যানিমেশন মুভি কি রয়েছে যাতে ইসলামী ভাবধারায় শিশুদেরকে অনুপ্রাণিত করতে পারে? আমাদের ভিতর ক'জন শিশু সাহিত্যিক রয়েছেন ইসলামকে একেবারে শিশুমনে রেখাপাত করানোর মত লিখনি উপহার দিতে সক্ষম?
তাই সময় এসেছে এই ব্যাপারটি নিয়ে নতুন করে ভাববার। যার যার যায়গা থেকে আমরা একেবারে নিজ নিজ পরিবারে শিশুদেরকে ইসলামকে সামনে রেখে সবকিছু উপস্থাপন করা শুরু করতে পারি। বেছে বেছে ইসলামিক বই তাদেরকে উপহার দিতে পারি। আমাদের দেশে বাচ্চাদের উপহার দেবার বেলায় প্রায়ই দেখি, মেয়েদেরকে দামী বার্বি পুতুলের সেট, আর ছেলেদেরকে খেলনা গাড়ী কিংবা খেলনা আগ্নেয়াস্ত্র। কেউ বই দিলেও ছড়া-কবিতা যেখানে ইসলামকে নিয়ে কোনো অনুভূতিই থাকেনা।
আমি লিখছি, কিন্তু আমি নিজেও এতোদিন এরকম করে এসেছি। তবে আমি যা করেছি, তা ভুল করেছি। এখন এই পড়ন্তবেলায় এসে আমি যদিওবা ভুলকে শুধরে নিতে চাচ্ছি- তবে রাষ্ট্রীয় ভাবে আমার সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।
তাহলে কি করব আমি?
কি করা উচিত আমাদের?
শেষ পর্যন্ত কি হবে?
বিষয়: বিবিধ
১২৯২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমানের আবাস ভূমি বাংলাদেশে- ইসলাম ও নৈতিকতা কে সমূলে উৎখাত করতে সুদূর প্রসারী চিন্তার ফসল পাঠ্য পুস্তকে ইসলাম বিদ্বেষী বিষয়ের সংযোজন।
কোমলমতি শিশুদের মগজে কৌশলে নাস্তিক্যবাদের বীজ ছড়িয়ে দিচ্ছে।
দল-মত নির্বিশেষে এখনই তা প্রতিরোধ না করলে ধর্মবিমুখ নাস্তিক্যতার সয়লাবে বিলিন হয়ে যাবে আগামী প্রজন্মের ধর্মানুভূতি।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
#শিক্ষা - সেতো প্রশ্ন ফাঁসে সীমাবদ্ধ ,
#চাকরী - সেতো ঘুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ,
#চিকিৎসা - সেতো টাকার মাঝে সীমাবদ্ধ ,
#বিদ্যুৎ - সেতো শোনার হরিণ , অপেক্ষায় সীমাবদ্ধ ,
#রাজনীতি - সেতো অবৈধ অস্রের মদ্ধে সীমাবদ্ধ ,
#অর্থনীতি - সেতো রাবিশ মন্ত্রীর পকেটে ,
#সমাজনীতি - সেতো মূর্খ এক খবিশের দখলে ,
#ইতিহাস- সেতো ভ্রান্ত পথে যুগে যুগে বিকৃত ,
#বিবেক - সেতো আবেগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ,
#প্রেম - সেতো লিভটুগেদারে সীমাবদ্ধ ,
#ভালোবাসা - সেতো আকাশ কুসুম চিন্তা করা ,
#মাদক - সেতো নিয়মিত খাবারে সীমাবদ্ধ ,
আমি গর্ভবতী ! এই ডিজিটালাইজ পেয়ে , আপনি ??????????????
ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ [url https://www.facebook.com/profile.php?id=100008142219467 href="null" target="_blank"]null ফেজবুকে আমি [/url]
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সাহিত্য তো কম পড়িনি, বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, অন্তত শিক্ষা মন্ত্রীর চেয়ে বেশী পড়েছি। তারপরও ছেলেকে বুঝাতে পারিনি মূল ভাবার্থ কি?
আকল দিয়ে বুঝতে পেরেছি, হুমায়ুন আজাদ সেখানে ধর্মকে কটাক্ষ করতেই কথাটি বলেছেন, কেননা তাঁর সাহিত্যের উপজীব্য বিষয় হল বিদ্ধেষ, ইতরামী আর লিঙ্গ নিয়ে নাড়াচাড়া করা। অনেক ধন্যবাদ
কন্যার যৌবন দেখে কামভাবের
কথা নিজের লেখনীতে ব্যাক্ত করেছিলেন (আস্তাগফিরুল্লাহ)।
শুভেচ্ছা রইলো অনেক অনেক।
বর্তমান বিশ্বে ইসলামের দাওয়াতের উপস্থাপনা কৌশলটি ৯৯% নেতিবাচক! অথচ আল্লাহতায়ালা ইতিবাচক কথাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন!
শিশুদের কাছে আমরা তো ইসলামকে ইতিবাচকভাবেই উপস্থাপন করতে পারি!
যে বই তোমায় স্বপ্ন দেখায়,
অনন্ত সুখ-স্বর্গ দেখায়
সে-বই কেন পড়বে না-
পড়তে হবে! পড়তে হবে!
যে-বই মনের দৃষ্টি খোলে
আকাশ-জমিন সৃষ্টি দোলে,
সে-বই কেন ধরবে না-
ধরতে হবে! ধরতে হবে!
যে বই ভালোর রাস্তা দেখায়
যে বই কাজে আস্থা শেখায়
সে বই কেন চিনবে না-
চিনতে হবে! চিনতে হবে!
এমন কবিতা যিনি লিখতে পারেন, আল্লাহপাক কেন এসকল মানুষদের লিখনিকে পাঠ্যপুস্তকে সন্নিবেশিত করছেন না।
এরকম ইতিবাচক মানসিকতার কিছু মানুষ প্রয়োজন আমাদের দেশে। একেবারে গোড়া থেকে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে শিশুদেরকে ইসলামিক ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
খুব ভালো লাগল আপনার নান্দনিক মন্তব্যটি আবু সাইফ ভাই।
আল্লাহপাক আপনার হায়াত বৃদ্ধি করে দিন-আমীন। যাতে আপনি আপনার লিখনির যাদু দিয়ে সবাইকে মোহাবিষ্ট করতে পারেন।
অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন